ইউএনবি পাঠকদের সামনে এরকম গতিশীল কিছু নারী উদ্যোক্তার জীবন কাহিনী তুলে ধরছে যারা নির্ভীকভাবে চষে বেড়াচ্ছেন অপরিচিত খাতগুলো।
আজকের এই নতুন যুগে নিজের সাফল্যের কাহিনী রচনা করা ছোট্ট শহরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নয়নের কথাই ধরুন। জান্নাতুল তার পছন্দের বিষয়ে ডিপ্লোমা সফলভাবে শেষ করার পরে স্থাপত্যবিদ্যায় উচ্চতর পড়াশোনা করার জন্য কয়েক বছর আগে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দিন থেকেই তিনি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। অবশেষে তিনি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকায় ‘আর্টিস্ট ফ্যাশন’ নামে অনলাইন বুটিক চালু করে তার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্কিটির প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন
দেশের ব্যবসা উদ্যোগের ৯৯.৮৪ শতাংশই সিএমএসএমই
জান্নাতুল বলেন, ‘আমার বাবা-মা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় কোনো ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোটেও খুশি হননি। তারা চেয়েছিলেন যেন আমি সরকারি চাকরি করি।’
‘আমি মিরপুরে একটি বুটিক হাউসের মালিক এবং মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা উপার্জন করি,’ বলেন তিনি।
আয়েশা সিদ্দিকা লিমা আরেক নারী উদ্যোক্তা যিনি সফল হওয়ার জন্য সঠিক জায়গায় এসেছেন। প্রকৌশলে স্নাতক করা আয়েশা শিশুদের পোশাক বিক্রির জন্য ‘বেবি'স এবং লেডিজ পয়েন্ট’ প্রতিষ্ঠা করে তার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার কখনোই চায়নি যে আমি এ জাতীয় একটি চটকদার ব্যবসা শুরু করি। তবে আমি পারিবারিক চাপকেও এ সাফল্যের জন্য সহ্য করেছি।’
আয়েশা বলেন, ‘ব্যবসার অর্থ স্বাধীনতা, যা জীবন সংগ্রামকেও সহজ করে দেয়। এখন আমি মাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা আয় করি। আমার মন্ত্র- নিজের দৃঢ়তা সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।’
অপর নারী উদ্যোক্তা তাপসী মনিরাও অতীতের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার অনলাইন গিফট স্টোর ‘আরবান টাচ বিডি’ দিয়ে শুরু করি। প্রথমদিকে অনেক লোক আমার সাথে মজা করত। এখন আমি কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছি এবং বর্তমানে মাসে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করছি।’
স্বপ্ন বুটিকের মালিক এফএ আইরিন হলেন আরেক সফল নারী উদ্যোক্তা।
আরও পড়ুন:ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অল্প সুদে ঋণ দেয়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী
উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার: প্রতিমন্ত্রী
অনলাইন ব্যবসায় সাফল্য পেতে জেনে নিন ১০ ধাপ
তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু আমার পরিবার আমাকে কখনই সমর্থন করেনি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি প্রমাণ করেছি যে পুরুষ-শাষিত সমাজেও কিছুই অসম্ভব নয়।’
ক্যানি গোমেজ তার মেয়ের নাম অনুসারে ‘ডায়না ক্রিয়েশন’ নামে একটি অনলাইন শপ শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র আট হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম এবং এগিয়ে যেতে আস্তে ধীরে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আমার প্রিয় কন্যা আমার কাজের অনুপ্রেরণা।’
এই নারীরা অতীতে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করলেও বর্তমান সমাজ তাদের গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এই নতুন উদ্যোক্তাদের সাফল্য একটি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান এবং একটি প্রজন্মকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।